বাড়ির ছাদে শখের বসে করা ধান চাষে সাফল্য
বাড়ির ছাদে ফুল বা ফল চাষের সাথে আমরা সবাই কম বেশী পরিচিত। কিন্তুু অভাবনীয় হলেও বাড়ির ছাদে বোরো ধান চাষ করে রীতিমত তাক লাগিয়ে দিয়েছেন যশোর শহরের বকচর বিহারী কলোনী এলাকার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম। পেশায় একজন ব্যবসায়ী হলেও শুধুমাত্র শখের বশেই নিজের বাড়ির ছাদে করেছেন বোরো বি-আর ২৮ জাতের ধানের চাষ।
সরেজমিনে রফিকুল ইসলামের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত কয়েক বছর আগে তিনি ছাদের উপর পেয়ারা, লিচু এবং আমের চারা রোপণ করেন। সে চারাগুলো থেকে প্রাপ্ত বয়সে ভাল ফলনও পেয়েছিলেন । কিন্তুু গাছগুলোর বয়স বেশি হয়ে যাওয়ায় ফলনও দিনকে দিন কমে যাচ্ছিল। যার কারণে রফিকুল ইসলাম ঐ গাছগুলো কেটে ফেলে চলতি বোরো মৌসুমে বি-আর ২৮ জাতের ধানের চারা রোপণ করেন। তার স্বপ্নের এ ধান এখন প্রায় ঘরে তোলার মতো হয়েছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে তিনি ছাদের উপর লাগানো ধান কাটবেন।
ঐ বাড়ির ছাদের ধানক্ষেত ঘুরে দেখা গেছে, ছাদের চারপাশে দুই হাত ফাঁকা রেখে ইটের গাঁথুনি দিয়ে রেলিং তৈরি করা হয়েছে। আর রেলিংয়ের মাঝে দেয়া হয়েছে মাটি। যদিও মাটি দেয়ার আগে ছাদের উপর দেয়া হয়েছে পলিথিন এবং তার উপর দুই ইঞ্চি পুরু করে ইট, বালু ও সিমেন্ট দিয়ে ঢালাই। যেন মাটির কারণে বাড়ির ছাদের কোনো ক্ষতি না হয়। এরপর রোপণ করা হয়েছে ধানের চারা। আর সার হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে বাসা-বাড়ির সবজির বর্জ্য।
রফিকুল ইসলাম জানান, প্রতিদিনই তার বাসায় রান্নার তরি-তরকারির কিছু অংশ ফেলে দিতে হয়। সেগুলো তিনি বাহিরে না ফেলে একটি গর্তে জমা করেন। পরবর্তীতে সেটা পচে পরিনত হয় জৈব সারে। প্রয়োজনতো সেই সার তিনি ছাদের ধানক্ষেতে ব্যবহার করেন। আর পানির ট্যাংকের বিদ্যুৎ চালিত সেচযন্ত্র দিয়ে পানি উত্তোলন করে সেচ দিয়েছেন ছাদে তৈরী শখের ধানক্ষেতে। ।
সৌখিন ধানচাষী রফিকুল ইসলাম আমাদেরকে বলেন, নিজের শখের খেয়ালে বাড়ির ছাদে ধান চাষ করায় প্রথমদিকে বিভিন্ন লোকজন নানা রকম কথা বললেও ধানের ফলন দেখে তিনি বেজায় খুশি। তিনি আরও বলেন, ইচ্ছা আছে আগামী বোরো মৌসুমে একই বাড়ির ছাদে বাসমতি ধানের চাষ করব। বর্তমানে প্রতিনিয়ত স্থানীয় লোকজন ছাড়াও পার্শ্ববর্তী এলাকার মানুষ ও কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা ছুটছেন রফিকুল ইসলামের বাড়ির ছাদে। উদ্দেশ্যে একটাই, তার বাড়ির ছাদের উপর ধান চাষ দেখা। সৌখিন ধান চাষী রফিকুল ইসলাম আশা করছেন তার ছাদে তৈরী দুই শতাংশ জায়গাতে ধান চাষ করে প্রায় দেড় থেকে দুই মন ধানের ফলন পাবেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে যশোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক হেমায়েত উদ্দীন প্রতিক্ষনকে বলেন, ধান যেহেতু মাটিতে হয় তাই অনুরুপভাবে বাড়ির ছাদে মাটি দিয়ে তৈরী জায়গার উপর ধান ফলেছে এবং মাঠে ধান চাষের ন্যায় পরিচর্যাও করা হয়েছে। ফলে আবাদও ভালো হয়েছে। কৃষি কর্মকর্তা হেমায়েত উদ্দীন আরও বলেন, এই ভাবে ধান চাষ করে ভালো ফলন পাওয়া সম্ভব কিন্তু বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হওয়া যাবে না।
প্রতিক্ষণ/ এডি/শাআ